জুলকার নাঈন একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তাঁর পোর্টফোলিও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত রিপোর্ট এবং আর্টিকেল সমৃদ্ধ। তিনি মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অভিবাসন বিষয়ে রিপোর্ট করে থাকেন।
জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একজন নাগরিক হিসাবে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অধিক রিপোর্ট প্রকাশে আগ্রহী। তাঁর ক্লাইমেট ট্র্যাকারের সঙ্গে একত্রে জন্য বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তিনি ক্লাইমেট ট্র্যাকার দক্ষিণ এশিয়া নেটওয়ার্কে জড়িত। তরুণদের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সাংবাদিক সৃষ্টি করাই ক্লাইমেট ট্র্যাকারের লক্ষ্য।
তিনি ক্লাইমেট ট্র্যাকারের একজন দক্ষিণ এশিয়া ফেলো। তিনি নির্ধারিত একটি এসাইনম্যান্টের অধীনে বিভিন্ন মিডিয়াতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।
এছাড়া, জুলকার ক্লাইমেট ট্র্যাকারের ট্রেইন দ্যা ট্রেনার সার্টিফাইড একজন সাংবাদিক যিনি যে কোনও জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিকতার কোর্সটি ডিজাইন করতে পারেন।
জুলকার নাঈন অন্যান্য ক্লাইমেট ট্র্যাকার কর্মীদের সহায়তায় কোর্স তৈরি করেছেন। একজন তরুণ ক্লাইমেট এডভোকেট হিসাবে তাঁর লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের জ্ঞান সমাজে ছড়িয়ে দেয়া।
জুলকার কমিউনিকেশন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস থেকে মিডিয়া স্টাডিজ এবং সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তিনি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু বিষয়ক সাংবাদিকতা নিয়ে একটি কোর্স চালু করছেন। এই কোর্সের মূল উদ্দেশ্য:
১. জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান।
২. জলবায়ু সাংবাদিকতার বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের গাইড করা।
৩. আগ্রহী অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রশংসাপত্র প্রক্রিয়া চালু করা।
এছাড়া সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন।
সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ এবং বাণিজ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ এবং বাণিজ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণপূর্বক একটি সিরিজে প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপট প্রকাশিত হল।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। এটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাস। অনন্য প্রধান প্রজাতি হিসাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে, অবৈধ শিকার এবং বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। বিভিন্ন রিপোর্টের তথ্য অনুসারে, ৩০ টিরও বেশি জলদস্যু এবং শিকারিচক্র সুন্দরবনে বাঘ হত্যা এবং বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে সক্রিয় রয়েছে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবন রক্ষায় বন বিভাগের নিজস্ব লজিস্টিক্যাল ব্যবস্থাপনা চাহিদার তুলনায় ন্যূনতম। তা সত্ত্বেও বন বিভাগ সুন্দরবনের টহল নিরীক্ষণ ব্যবস্থাপনাটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
জাতীয় উদ্যান আইন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলোচ্ছ্বাসের প্রকৃতি জন্য বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবন বরাবরই বন্য প্রাণী এবং জলদস্যু কার্যকলাপের জন্য বিপজ্জনক। অধিকন্তু, হরিণে মাংস, চামড়া, দাঁত এবং অন্যান্য হাড় নিয়ে হরহামেশাই বাণিজ্য হচ্ছে। বন্যপ্রাণীর এমন অবৈধ বাণিজ্যের প্রতিকার প্রয়োজন।
এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ম্যানগ্রোভ বনের স্বাস্থ্য, কৃষিকাজ এবং ফসলের গুণগত মানকে মারাত্মকভাবে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলেছে। পরিবর্তনশীল জলবায়ুর ফলস্বরূপ বন এবং সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান রোগ এবং কীটপতঙ্গের প্রাদুর্ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আয়ের সন্ধানে স্থানীয়রা অনেকেই বন্যপ্রাণী শিকার, ক্রয়-বিক্রয়ে নিজেকে জড়িয়েছেন।
একটি রিসার্চ টিম সুন্দরবনের এই সকল প্রতিকূলতা, জীববৈচিত্র্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া পরিবর্তনশীল জলবায়ুর প্রভাবে স্থানীয় মানুষের আয়ে কি পরিবর্তন হয়েছে তার উপর প্রতিবেদন হবে। এই রিসার্চ বর্তমানে কিভাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ এবং বাণিজ্যকে কিভাবে প্রভাবিত করছে তা জানার চেষ্টা করবে।
এই প্রকল্পটি ক্লাইমেট ট্র্যাকারের দক্ষিণ এশিয়া ফেলো জুলকার নাঈন এবং আনন্দ টিভির বিশেষ সংবাদ প্রতিবেদক মাহফুজুর রহমানের একটি যৌথ প্রকল্প।